দারিদ্র্য দূর করার একমাত্র পথ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আল্লাহপাকের নির্দেশ মেনে চলা

দারিদ্র্য দূর করার একমাত্র পথ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আল্লাহপাকের নির্দেশ মেনে চলা

দারিদ্র্য দূর করার একমাত্র পথ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আল্লাহপাকের নির্দেশ মেনে চলা

মতিহার বার্তা ডেস্ক: সর্বজন স্বীকৃত বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব , নবীকুল শিরোমণি রসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন, দারিদ্রতা মানুষকে কুফরীর দিকে ধাবিত করে। অর্থাৎ মানষ আল্লাহবিমুখ হয়ে পড়ে। ধর্ম,কর্ম ছেড়ে দেয়। আর এ জন্যই রাসূলে পাক (সাঃ) জাহাদুলবালা অর্থাৎ দারিদ্রতা থেকে আল্লাহ পাকের আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন (বোখারী শরীফ)।

কারন আর্থিক অস্বচ্ছলতা থাকলে মানুষের মন-মেজাজ ঠিক থাকে না। আর মন মেজাজের শান্তির উপরই নির্ভর করে পরিপূর্ণ ইবাদতের নিশ্চয়তা। রসূলেপাক (সাঃ) বলেছেন, লা ছালাতা ইল্লা বি হুজুরিল কালব। অর্থাৎ মনের একাগ্রতা ছাড়া সঠিকভাবে নামাজ আদায় হয় না।

একাগ্রতা তখনই সম্ভব যখন মানুষ সকল প্রকার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকে। আর্থিক অস্বচ্ছলতা মানুষকে দুম্চিন্তামুক্ত করতে পারে না। এরপর আসুন সামাজিক শান্তির কথায়। এখানেও লক্ষ্য করবেন যে, সমাজে যত প্রকার অশান্তি আছে, বিশৃঙ্খলা আছে, তার মূলে রয়েছে দারিদ্রতা। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই,

রাহাজানি, ঘুষ, দুর্নীতি, আমানতে খেয়ানত , জেনেশুনে পরের সম্পদ আত্মসাৎ ইত্যাদির কারণ দারিদ্রতা। চু’রি, ডা’কাতি ,ছিন’তাই’কারী, দুনীৃতিবাজরা খুব ভাল করেই জানে যে , তাদের এই অপকর্ম লোক সম্মুখে ফাঁশ হয়ে গেলে অপমানিত হতে হবে, জেলজুলুম খাটতে হবে।

এমনকি বেকায়দায় পড়লে জীবনটা পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তারপরও ক্ষুধার জালা সহ্য করতে না পেরে মানুষ এ সমস্ত ঘৃণ্য পথ অবলম্বন করতে বাধ্য হয়। অনেক সময় ক্ষুধার জালা সহ্য করতে না পেরে আত্মহ’ত্যার পথ বেছে নেয়। অবুঝ ছেলেমেয়েদের বিষ মিশ্রিত খাবার খাইয়ে নির্মমভাবে হ’ত্যা করে,

নিজেও এ পথ বেছে নেয়। প্রাণপ্রিয় স্ত্রীকে ভরণপোষন করতে অপারগ হয়ে তালাকের পথ বেছে নেয়। আবার কোন সময় স্ত্রীর বাপের বাড়ী থেকে যৌতুক এনে দিতে স্ত্রীর উপর নি’র্যাতন চালায়। সেই নি’র্যাতনগুলো কখনও এমন লোমর্হষক বীভৎস হয় যা লিখতে গেলে কলম কেঁপে উঠে।

যদি সমাজে দারিদ্রতা না থাকত তাহলে কী এমনভাবে মা-বোনদের জীবন দিতে হত? নারীদের ভরণপোষনের সমস্ত দায়িত্ব আল্লাহপাক পুরূষদের উপর ন্যস্ত করেছেন। পুরূষরা তাদের সে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই মহিলাদের উপার্জনে নামতে হচ্ছে।

পুরূষদের পাশাপাশি কাজ করতে হচ্ছে । এর এই এক সাথে কাজ করার কারণেই বেগানা পুরূষদের সাথে মিশতে হচ্ছে এবং পর্দা ঠিক রাখা সব সময় ঠিক হচ্ছে না। আর এই বেপর্দাই মহিলাদের বিপথগামী হতে সাহায্য করছে। যারা কাজ পাচ্ছে না অথবা পুরূষদের নিকট থেকে তালাকপ্রাপ্ত হয়ে সুষ্ঠ জীবনযাপনে ব্যর্থ হচ্ছে তাদের অনেকে সমাজের নিকৃষ্ঠতম পেশা গ্রহন করতে বাধ্য হচ্ছে।

এক কথায় আমরা এসব অশান্তি, অনাচার, অ’ত্যা’চার, জুলুম, নি’র্যা’তন, খু’ন-খারাবী, সামাজিক বিশৃঙ্খলার জন্য দারিদ্রতাকে অনেকাংশে দায়ী করতে পারি। ইসলাম এই দারিদ্রতা থেকে আশরাফুল মাখলুকাতকে রক্ষার জন্য স্বচ্ছল ব্যক্তিদের প্রতি কড়া নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহপাক বলেছেন , আকিমুস সালাতা অয়াতুজ জাকাতা। অর্থাৎ নামাজের পরই আল্লাহপাক জাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন । মালদারদের প্রতি তাদের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ অভাবগ্রস্ত লোকদের মধ্যে বিতরন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এটি ইসলামের অবশ্য পালনীয় পঞ্চ স্তম্ভের একটি অন্যতম স্তম্ভ।

যাকাত প্রদান করা না হলে কবীরা গুনাহ হবে। অস্বীকার করলে বেঈমান হয়ে যাবে। রসূলে পাক (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর হযরত আবু বকর (রাঃ) যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীদের বিরূদ্ধে জেহাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন –এতেই বুঝা যায় ইসলামে যাকাতের কত গুরূত্ব।

যাকাতের মূল লক্ষ্য হল , সমাজ থেকে দারিদ্র দূর করা। সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করা হলে সমাজে দারিদ্র থাকার কোন প্রশ্নই আসে না।
এজন্য রসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন, সমাজের বিত্তশালী লোকদের নিকট থেকে হিসেব মোতাবেক যাকাত আদায় কর এবং সমাজের গরীব-দুঃখী মানুষের মধ্যে বিতরন করে দাও।

হযরত আবুজর গিফারী (রাঃ) বলেন , আমি হুজুরের খেদমতে হাজির হলাম। তিনি তখন কাবা ঘরের ছায়ায় বসেছিলেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, কাবার প্রভুর শপথ। যার নিকট অনেক কিছু রয়েছে সেই ক্ষতিগ্রস্ত । আমি আরজ করলাম এরা কারা?

রসূলে পাক (সাঃ) উত্তরে বললেন, যে সমস্ত লোকদের নিকট অগাধ সম্পদ রয়েছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তাদের মধ্যে যারা হাত খুলে আল্লাহর রাস্তায় দান করে, তাদের কোন ভয় নেই। একথা বলার সাথে সাথে আল্লাহর রসূল (সাঃ) স্বীয় হাত দু’খানি ডান-বামে ফেরাতে ছিলেন।

অতঃপর তিনি বললেন , এ ধরনের লোকের সংখ্যা খুবই অল্প। যাদের নিকট পর্যাপ্ত গরু, ছাগল ও উট আছে আর তার যাকাত আদায় করে না কিয়মতের দিন ঐ সমস্ত পশুকে অত্যন্ত ভয়াবহ আকৃতি ধারণ করিয়ে তাদের নিকট উপস্থিত করা হবে।

পশুগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের মনিবকে শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। একটির পর একটি এভাবে শাস্তি প্রদান করতে থাকবে। এভাবেই সমস্ত লোকের হিসেব শেষ হয়ে যাবে (বোখারী মুসলিম)। সুতরাং প্রতিটি সম্পদশালী মুসলমানকে যাকাত প্রদান করতে হবে।

এর এভাবেই অভাবগ্রস্ত লোকদের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে। প্রতিটি মুসলমানদের ঘরে শান্তি ফিরে আসবে। সামাজিক বিশৃঙ্খলতা দূর হবে। চু’রি, ডা’কাতি, জু’লুম, নি’র্যা’তন, ছিনতাই, রাহাজানি, খু’ন, ব্যাভিচার দূরীভুত হয়ে এক অনাবিল শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

এবারে যাকাত প্রদানের কতগুলো অনিয়মের কথা তুলে ধরছি। আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে যাকাত প্রদান করা হয় তাতে যাকাত প্রদানের উদ্দেশ্য মোটেও পূরণ হয় না। কারণ ১০/২০ টাকা অথবা একটা শাড়ি, লুঙ্গি দিলে কারো অভাব দূর হয় না।

যাকাত দিতে হবে একটা পরিকল্পনার মাধ্যমে, যেমন আপনার পরিবারে ২ জন গরীর লোক আছে। আপনি যাকাত দিবেন ১০,০০০ টাকা। তাদের ডেকে আনুন। বলুন যে আমি আপনাদের দুজনকে ৫ হাজার করে।

মতিহার বার্তা ডট কম: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply